IE and Textile | Textile Learning Blog

রফতানি খাতে যত বেশি বৈচিত্র্য আসবে দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো তত বেশি শক্তিশালী হবে । Habibur Rahman - IE And Textiles

Breaking News

রফতানি খাতে যত বেশি বৈচিত্র্য আসবে দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো তত বেশি শক্তিশালী হবে । Habibur Rahman

 

রফতানি খাতে যত বেশি বৈচিত্র্য আসবে দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো তত বেশি শক্তিশালী হবে

 


আমাদের দেশে ভাল প্রতিষ্ঠান বলতে যে কয়েকটি নাম আপনার চিন্তায় আসবে তার ভিতরে একটা হল স্কয়ার গ্ৰুপ আমি নিজে গার্মেন্টস এর চাকুরীজীবি হওয়ার কারণে ভালুকায় অবস্থিত স্কয়ার ফ্যাশনস লিঃ এর সাথে অনেক খানি পরিচিত ২০০২ সালের দিকের কথা ইয়াংওয়ানে চাকুরী করি হঠাৎ দেখলাম ( প্রথম আলোতে যতদূর মনে পড়ছে) স্কয়ার-সারাহ ফ্যাশনের একপাতা জুড়ে বিশাল এক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে তখন এটা দুই কোম্পানির একটা জয়েন্ট ভেঞ্চার ছিল মার্চেন্ডাইজিং এর হেড হিসেবে এজিএম/ম্যানেজার এর পদে আবেদন করলাম 

উত্তরার মাসকাট প্লাজায় অফিস এর পরিবেশ দেখে বিমোহিত হয়ে গেলাম। দুই তিনটা ভাইবা হয়ে গেল আমাকে তাদের পছন্দ হল। শেষ পর্যন্ত বড় একটা বোর্ডের মুখোমুখি হতে হল এবং আমাকে বলা হল যেহেতু আমার অভিজ্ঞতা কম তাই আমি যেন দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে ম্যানেজার পদে জয়েন করি আর আমার উপরে একজন কে তারা নিয়োগ দিয়ে ফেলেছেন। মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল কারণ আমি দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে জয়েন করতে তো আসিনি। প্রথম ব্যক্তিটিকে আপনার সকলেই চিনেন তিনি একজন অত্যন্ত স্বজ্জন এবং অসম্ভব বিনয়ী মানুষ, পরবর্তীতে স্কয়ার ফ্যাশনস  আমাকে ফাস্টরিয়াক্ট সলুশ্যন বিক্রির ব্যাপারে দারুণ সহযোগিতা করেছিলেন। আর তারা জানিয়ে দিলেন যে পরবর্তীতে হেড অফিসে বসতে পারবেন। কিন্তু যেহেতু নতুন ব্যবসা তাই প্রথম দিকে ভালুকায় অবস্থিত সুবিশাল কারখানায় বসতে হবে সপ্তাহে দিন। অফিসের গাড়ি আপনাকে পিক এন্ড ড্রপের ব্যবস্থা করবে।  

যাই হোক ইন্টারভিউ বোর্ডকে বললাম, আমার সিদ্ধান্ত সিদ্ধান্ত পরে জানাব। তারপর দিন ময়মনসিংহ রোডের ঐতিহাসিক ঝটিকা পরিবহনে চড়ে ভালুকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। মহাখালী থেকে গাড়িতে উঠতেই এয়ারপোর্টে আসার পর কন্টাক্টর আর যাত্রীদের মধ্যে কি যেন এক কারণে মারামারি লেগে গেল। নতুন জায়গায় যাব তাই ঝামেলা এড়িয়ে বাস থেকে নেমে যাওয়ার সময় দুই চারটা কিল ঘুষির ভাগিদার হলাম। কোনমতে পালিয়ে বাঁচলাম। তারপর এয়ারপোর্ট থেকে নানা ঝক্কি ঝামেলা পোহায় চার ঘন্টা পরে কারখানার সামনে যখন নামলাম তখন দুপুর দুইটা বাজে। ক্ষুধায় অবস্থা নাজেহাল। চার ঘন্টার লেগে যাওয়ার কারণে মেজাজ খুব খারাপ। এতদূরে কারখানা করার দরকার কি ছিল আর আমি কি এমন বিপদে পড়েছি যে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে আমাকে এতদূরে অফিস করতে হবে ? চাকরি করবনা মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম।  

চাকরি করবনা কিন্তু কারখানা তা তো দেখা দরকার তাই কারখানার নং গেটেপরিচয় দিলাম, আমার আপাদমস্তক দেখে তিনি ঢুকতে দিলেন না। বললেন, স্যার জয়েন করে তারপর আসেন আপনাকে ঢুকতে দেয়া হবে। বললাম কারখানার ভিতরে মসজিদ আছে কি না , নামাজ পড়তে পারব কি না? কিন্তু ভদ্র লোক কোনমতেই রাজি হলেন না। 

কারখানার পরিবেশ, সবুজ গাছপালা, দারুন বাঁধানো রাস্তা ঘাট দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম সিদ্ধান্ত নিলাম বড় হতে হলে কষ্ট করতে হবে। আর এই ব্যাটা দারোয়ানের কাছে থেকে সালাম নেয়ার জন্য হলেও চাকরী করব। 

যাইহোক কারখানার উল্টা পাশে নামাজ পড়লাম আর একটা ছোট্ট হোটেলে মুরগির ঝোল আর ডাল দিয়ে অনেকগুলো খাবার খেয়ে ফেললাম। হোটেলের ম্যানেজার এর সাথে খাতির করার চেষ্টা করলাম , তাকে আমার পরিচয় দিলাম এবং বললাম কারখানায় ঢোকার কোন ব্যবস্থা আছে কি না। উনি না বলে দিলেন। এরপর একটা মাটির কাপে বগুড়ার দই দিলেন। বললেন খেয়ে দেখেন আমার এলাকার থেকে নিয়ে আসা দই খুব ভালো লাগবে। দই খেয়ে ফিরতি গাড়িতে চড়ে চলে আসছি। ইজতেমার মাঠের কাছে আসার পর পেট মোচড় দিল। কন্টাক্টার সাহেব কে ঘটনা বললাম উনি বললেন, এয়ারপোর্টের কাছে বোনানজা তে ভাল বাথরুম পাবেন একটু চেপে থাকেন, কিছুক্ষনের মধ্যেই পৌঁছে যাব। কিন্তু বেচারা এক ঘন্টাতেও আব্দুল্লাহপুর পার হতে পারলনা। যাই হোক আবার সেই মাস্কাট প্লাজার সামনেই এসে দৌড়ে গাড়ি থেকে নেমে গেলাম। নায়িকা মৌসুমীর বাসার দোতলায় একটা চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ছিল, কোনমতে মানসম্মান টা বাঁচলো কিন্তু মোবাইল আর মানিব্যাগ বাথরুমে রয়েই গেল। পরবর্তী বাসে উঠে বনানীতে আসতেই কন্টাক্টর সাহেব ভাড়া চাইলেন। পকেটে হাত দিয়ে দেখি কিছুই নাই, ভাবলাম পকেট মার হয়ে গেল কি না। ড্রাইভার কে গিয়ে ঘটনা টা বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করলাম। ড্রাইভার সাহেব বেশভুষা দেখে কোনমতেই বিশ্বাস করতে চাইছিলেন না। পান খাওয়া দাঁতের কেলানো হাসি দিয়ে বললেন, টাউট বাটপারে দেশটা ভড়ে গেছে। ব্যাপারটা যে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলা তা আর বুঝতে বাকি রইলনা।

যাইহোক তাদের দয়ায় কোনমতে সেদিন বাসায় এলাম। হঠাৎ মনে পড়লো যে, আমি তো বাথরুমে মোবাইল আর মানিব্যাগ বের করে রেখেছিলাম। যেই ভাবা অমনি আবার দৌড়, কিন্তু কোনটাই আর পেলাম না। মৌসুমীর বাসার সামনে থেকে মাসকাট প্লাজার দিকে তাকিয়ে থাকলাম, আর সিদ্ধান্ত পাকা করে ফেললাম যে, আমি আর তোমাদের সাথে নাই বাপু। 

আর জয়েন করা হলনা। পরবর্তীতে ২০০৭ সালের দিকে আবার ফাস্টরিয়াক্ট বিক্রির জন্য যাওয়া আসা শুরু হল। মার্চেন্ডাইজিং হেডের দিকে আড়ে আড়ে গোপনে চেয়ে থাকি। পরবর্তীতে মিস সাঞ্চিয়া চৌধুরীর সাথে পরিচয় হল। বোর্ডের সকল সদস্যের সাথে পরিচয় হল কিন্তু এক ঘটনার কথা নিতান্তই চেপে গেলাম। 

আমার মনে পড়ে যে আমাদের সল্যুশনের ফাইনাল প্রেজেন্টেশনে প্রায় তিন ঘন্টা সময় লেগেছিল এবং কোটি টাকা সমমানের চুক্তি ফাইনাল হয়েছিল। সাঞ্চিয়া চৌধুরী আপা আমাকে পরবর্তী জীবনে হেলিকপ্টার বিক্রি করার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন, এবং বলেছিলেন আপনার পক্ষে যে কোন দামী প্রোডাক্ট বিক্রি করা সম্ভব। আরো বলেছিলেন, হাবিব সাহেব আপনি যদি কখনো আপনার জব ছেড়ে অন্য কোথাও জয়েন করতে চান তাহলে সোজা আমার কাছে চলে আসবেন। এরপর অনেকবার ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে স্কয়ার ফ্যাশনস যাওয়া হয়েছে কিন্তু ওই দারোয়ান সাহেব কে আর খুঁজে পাইনি। 

২০০৭ সালে প্রথম যেদিন স্কয়ার ফ্যাশনসে প্রবেশের সুযোগ পেলাম সেদিন বারবার আমার মনে হচ্ছিল যে, বড্ড বেশি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল আমার জয়েন না করা। রিসিপশন থেকেই আপনার কাছে মনে হবে পাঁচ তারকা মানের কোন রিসোর্টে আপনি প্রবেশ করছেন। কারখানার ভিতরের পরিবেশ যে কি সুন্দর আর মনোরম তা তো বলার অপেক্ষা রাখেনা। দুপুরের লাঞ্চের জন্য দারুন মানের একটা খাবারের জায়গাতে আমাদের নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হল। সুবিশাল সবুজ ঘাসের লন পাড় হয়ে একটা গেস্ট হাউজ আছে। রাত্রে থাকার ব্যবস্থা আছে সেখানে। আমার ইয়াংওয়ানের পুরাতন কলিগ মোরশেদ ভাই ছিলেন প্রোডাকশনের ডাইরেক্টর, আলমগীর ভাই তখন একাউন্টস এন্ড ফিন্যান্স ডাইরেক্টর, বিপ্লব ভাই ছিলেন তখন ফাইন্যান্স এন্ড কস্ট কন্ট্রোলে। সকলের বিনীত ব্যবহারে আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে গেলাম। আমার সাথে থাকা তিনজন বিদেশী ভদ্রলোক কারখানা, কাজের পরিবেশ এবং সকল ধরণের ব্যবস্থাপনা দেখে অভিভূত হয়ে গেলেন। পরবর্তিতে অসংখ্য বার এই কারখানাতে গিয়ে সকল সময় একই চিত্র দেখেছি। 

আমি নিজে স্কয়ার ফ্যাশনস এর বড় একজন ভক্ত বলতে পারেন, আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে স্কয়ার, ডিবিএল, প্যাসিফিক জিন্স, ইপিলিয়ন, ভিয়েলাটেক্স, ফকির গ্ৰুপ এর মত আরো কিছু প্রতিষ্ঠান দরকার। আজকের বাকি আলোচনা স্কয়ার গ্ৰুপ কে নিয়ে  

 

দেশের রফতানি খাতে যত বেশি বৈচিত্র্য আসবে দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো তত বেশি শক্তিশালী হবে বলে মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের। রফতানিতে ৫০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অর্জন রফতানিতে প্রাতিষ্ঠানিক অবদানের জাতীয় স্বীকৃতি নিয়ে আলাপচারিতায় স্কয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠান স্কয়ার ফ্যাশনসের কর্ণধার সানচিয়া চৌধুরী

স্বীকৃতি প্রদান শুরুর পর থেকে একাধিকবার রফতানি ট্রফি পেয়েছে স্কয়ার ফ্যাশন। জাতীয় স্বীকৃতি অর্জনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা কীভাবে সম্ভব হচ্ছে?

আমরা আসলে কয়েকটি মৌলিক বিষয়ের ওপর সবসময় মনোযোগী থাকতে চেষ্টা করি। সেগুলো হচ্ছে কাজের পরিবেশ, যেখানে প্রতিষ্ঠানের সব কর্মী হাসিমুখে নিরাপদ পরিবেশে কাজ করতে পারেন। কাজের পরিবেশের সঠিক মান নিশ্চিত করতে আমাদের জন্য সবচেয় বড় ভূমিকা রেখেছে একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ। আমাদের মধ্যে যারা মূলত মেশিনের চাকা ঘোরাচ্ছেন, যাদের জন্য প্রতিষ্ঠান দাঁড়িয়ে আছে, তারা ভিন্ন সামাজিক কাঠামো থেকে এলেও আমরা কখনো তাদের ভিন্ন চোখে দেখি না। এখানে আমরা সবাই সবাইকে শ্রদ্ধা সম্মান করি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের অসাধারণ কর্মপরিবেশ, যা আমাদের বার্ষিক জনশক্তি টার্নওভার হার কমিয়ে রাখতে সহায়তা করছে

উৎপাদিত পণ্যের মান, পণ্যের মানের দিক থেকে আমরা কখনই কোনো প্রকার আপস করি না, যা ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের আস্থা অর্জন করতে সহায়তা করছে এবং সর্বোপরি সঠিক সময়ে পণ্য সরবরাহ। মূলত বিষয়গুলো আস্থা অর্জন এবং ব্যবসা প্রসারে মূল ভূমিকা পালন করছে, যার যৌক্তিক ধারাবাহিকতা হিসেবে রফতানি ট্রফি অর্জন

জাতীয় স্বীকৃতি রফতানিকারকদের উৎসাহ প্রদানে কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারছে?

একটি দেশের রফতানি বৃদ্ধিতে অনেকগুলো বিষয়ে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে। জাতীয় স্বীকৃতি এর একটি অংশমাত্র। যারা স্বীকৃতি পাচ্ছে না তারাও কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে

একটি প্রডাকশন সিস্টেমের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জ্বালানি, এটি ছাড়া আমরা কোনো প্রকার উৎপাদনের কথা চিন্তাও করতে পারি না। বর্তমানে আমাদের জ্বালানির দাম অতীতের চেয়ে অনেক বেশি। প্রতি ঘনমিটারে আগের চেয়ে ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। আমি মনে করি নিয়ন্ত্রিত জ্বালানি মূল্য অনেক রফতানিকারকের উৎপাদনক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে পারে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে আরো অনেক কিছু জড়িত। বর্তমানে আমরা আমাদের কাঁচামালের মূল্যে ঊর্ধ্বমুখী ট্রেন্ড দেখতে পাচ্ছি, যা আমাদের ফাইনাল প্রডাক্টপ্রতি ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে, অন্যদিকে বায়াররা কিন্তু তাদের পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে না, উল্টো তারা প্রতিনিয়ত দাম কমাচ্ছে। তাই প্রডাক্ট ব্যয় প্রডাক্ট দামের মধ্যে ব্যালান্স করতে পারাটাই আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তাই বলা যায় যে জাতীয় স্বীকৃতির সঙ্গে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ, পরিপূর্ণ জ্বালানি সরবরাহ এবং উন্নত-টেকসই যোগাযোগ ব্যবস্থা

দেশের রফতানি খাতের প্রধান পণ্য পোশাক। মোট রফতানিতে ৮০ শতাংশের বেশি অবদান পোশাক পণ্যের। রফতানিনির্ভর টেকসই অর্থনীতি গড়তে একটি পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা নিয়ে আপনার মতামত কী?

বহুদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পোশাক শিল্পের প্রথমিক এবং একক অবদান রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ অতীতে ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালি, তারপর চীন ভারতের কথা বলাই যায়। উন্নয়নের ওপর ভর করে একটি পর্যায়ে সেসব দেশ অন্যান্য শিল্পে বিনিয়োগ শুরু করেছে এবং সফলতা পেয়েছে। দেখা গেছে পরিক্রমায় পোশাক শিল্প গৌণ খাত হয়ে গিয়েছে অথবা একটা সময় খাত থেকে সরে গিয়েছে

বর্তমানে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের মর্যাদা পেয়েছে। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি যে তা আমরা নিঃসন্দেহে বলতে পারি। এর পেছনে যে আমাদের পোশাক শিল্প অতুলনীয় অবদান রেখেছে তা আসলে আলাদা করে বলার প্রয়োজন দেখছি না। আমার নিজস্ব অভিমত যে অবশ্যই একটি রাষ্ট্রকে শুধু একটি শিল্পের ওপর নির্ভর করে চলা উচিত না, যেমনটা আমারা কখনই আমাদের প্রডাকশন শুধু একটি বায়ারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে চলি না। রফতানি খাতে যত বেশি বৈচিত্র্য আসবে দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো তত বেশি শক্তিশালী হবে বলে আমি মনে করি। বাংলাদেশেরও কিন্তু সেই সুযোগ তৈরি হয়েছে এবং এরই মধ্যে অন্যান্য বহু শিল্প রফতানিতে অবদান রাখতে শুরু করেছে। উদাহরণ হিসেবে ওষুধ, টেলিকমিউনিকেশন, ফুড-বেভারেজ শিল্পের কথা অবশ্যই বলতে হয়

তবে আমাদের দেশের অবকাঠামো এবং শিল্প ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা জরুরি, কেননা ভবিষ্যৎ শিল্প হবে টেকনির্ভর, যেখানে গতানুগতিক শিক্ষা ব্যবস্থা অনেকটাই দুর্বল বলে প্রতীয়মান হয়

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রফতানিকারক দেশ বাংলাদেশ। দেশে শিল্পের ভবিষ্যৎ কতটা টেকসই?

আমরা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রফতানিকারক দেশ এবং আমরা এই খাতে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছি। কিন্তু উন্নয়নের কোনো শেষ নেই। এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। আমাদের এখনো অনেক পথ চলার বাকি। আমরা দক্ষতার মাত্রা, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, পণ্য বহুমুখীকরণ এবং স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা বা অটোমেশনের দিক দিয়ে অনেকটা পিছিয়ে। আমরা এখনো পুরো সেক্টরটা চালাচ্ছি মানুষনির্ভর, কিন্তু বর্তমানে আমরা দক্ষ জনবল চাহিদা অনুযায়ী পাচ্ছি না। এর মূল কারণ হচ্ছে অন্যান্য শিল্পের বিকাশ। তাই আমাদের এখনই উচিত অটোমেশনের দিকে মনোযোগ দেয়া এবং সেই সঙ্গে আমাদের বিদ্যমান জনবলকে বহুমুখী দক্ষতাসম্পন্ন হিসেবে গড়ে নিজস্ব দক্ষতা সক্ষমতা বাড়ানো। তবেই আমরা ভবিষ্যতে জনবল সংকটে পড়লেও আমরা শিল্পকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব

এছাড়া উন্নত দেশগুলো বিভিন্ন ইনোভেশন আমাদের কাছে আসছে। আমাদের এখন সেইগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার মানসিকতা তৈরি করা এবং আমাদের জনশক্তিকে সে অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দেয়া উচিত

আরেকটি কথা না বললেই নয়। যেহেতু আমাদের পণ্য উৎপাদন ব্যয় দিনকে দিন বেড়েই চলছে, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির কারণে, আমাদের এখন চিন্তা করতে হবে কীভাবে নন-ভ্যালু আডিং ব্যয়গুলো কমানো যায়। আর সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের পুরো প্রডাকশন চেইনের অপচয়ের ফ্যাক্টরগুলো নিয়ে কাজ করা উচিত

যদি আমরা এসব বিষয় মাথায় রেখে সামনে এগিয়ে যাই এবং ধারাবাহিক উন্নতিকে আমরা যদি নিয়মিত চর্চার মধ্যে নিয়ে আসতে পারি তাহলে শিল্প নিয়ে আমরা আরো অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারব

বাংলাদেশে পোশাক উৎপাদনের বৈচিত্র্য নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কেমন? মৌলিক পণ্য থেকে সরে এসে বাংলাদেশের কি এখন শুধু হাইএন্ড পণ্য উৎপাদনের বিষয়ে মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন?

আমাদের পোশাক শিল্পের শুরুর দিকে আমরা শুধু টি-শার্ট শার্ট নির্ভর ছিলাম। এর মূল কারণ ছিল আমাদের কর্মীদের দক্ষতার সীমাবদ্ধতা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে আমরা আমাদের প্রডাক্টের মধ্যে ভিন্নতা আনতে সক্ষম হয়েছি। বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী বিগত বছর প্রডাক্ট মূল্যের ভিত্তিতে সবচেয়ে বেশি রফতানি হচ্ছে ট্রাউজার, তারপর টি-শার্ট, শার্ট জ্যাকেট। পণ্য বহুমুখীকরনের যে সীমাবদ্ধতা ছিল অতীতে তা আমরা অনেকটাই কাটিয়ে উঠছি। বর্তমানে আমাদের পণ্যের স্টাইল এবং নকশার বৈচিত্র্য অতীত থেকে অনেক বেশি। অতীতে আমরা একটা স্টাইল গড়ে -১০ দিন প্রডাকশন করতে পারতাম। বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে দু-তিনদিনে। এটাও আমরা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। এটার জন্য আমাদের সাপ্লাই চেইনে যা যা পরিবর্তন করা প্রয়োজন, সেটা করতেও সক্ষম হয়েছি

হাইএন্ড প্রডাক্ট কনসেপ্টটা আসলে নির্ভর করে সম্পূর্ণ ডিমান্ডের ওপর এবং এসব প্রডাক্ট আমাদের সমাজের একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী ক্রয় করতে সক্ষম। সেই সঙ্গে প্রডাক্টগুলোর কাঁচামাল, গুণগত মান বজায় রাখার ব্যয় তুলনামূলক বেশি, কিন্তু উৎপাদনশীলতা অন্যান্য প্রডাক্টের থেকে কম। তাই আমি মনে করি আমাদের হাইএন্ড প্রডাক্ট এবং লোয়ারএন্ড প্রডাক্টের মাঝে একটা সমন্বয় তৈরি করা, যা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করবে চাহিদার ওপর। একই সঙ্গে আমাদের হাইএন্ড প্রডাক্ট তৈরি করতে পারার জন্য যে ধরনের অবকাঠামো প্রয়োজন যেমনসক্ষমতা, দক্ষতা, অটোমেশন, অত্যাধুনিক যন্ত্র এবং পরিবর্তন ক্ষমতা, বিষয়গুলো উন্নয়নে কাজ করা উচিত

পোশাক উৎপাদনের ইতিহাস থেকে জানা যায়, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে পোশাক উৎপাদন কেন্দ্র ছিল। আর্থসামাজিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় শিল্পটিকে বাংলাদেশ আর কতদিন ধরে রাখতে পারবে বলে আপনি মনে করেন ?

অতীতে ইউরোপের অনেক দেশের মুখ্য শিল্প ছিল পোশাক শিল্প এবং সময়ের পরিক্রমায় শিল্প হারিয়ে গিয়েছে। এর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে আছে আর্থসামাজিক উন্নয়ন, কর্মীদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অন্যান্য শিল্পের বিকাশ। আমাদের দেশের বর্তমান পরিস্থিতিও কিন্তু সেদিকেই অগ্রসর হচ্ছে। আপনি যদি আমাদের কর্মীদের প্রশ্ন করেন তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? সিংহভাগই উত্তর দেবে, তারা তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে অন্য খাতে দেখতে চায়। এর কারণ হচ্ছে তারা তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে শিক্ষিত করছে। শিক্ষাগত যোগ্যতা কর্মক্ষমতার সঙ্গে আমাদের সামাজিক অবকাঠামোর সামঞ্জস্য রাখতে সময়ের সঙ্গে আমাদের খাতে কর্মীর অভাব দেখা দেবে। তাই আমাদের একটি নিখুঁত ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রয়োজন

যেসব উন্নত দেশে পোশাক শিল্প ছিল, তারা এখনো কিছু পোশাক উৎপাদন করে, কিন্তু একটু ভিন্ন উপায়ে। তাদের অধিকাংশ এখন হাইএন্ড প্রডাক্টগুলো করে সবচেয়ে কম জনবল ব্যবহার করে। এটা সম্ভব হয়েছে একমাত্র প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, উদ্ভাবন এবং ইন্টারনেট অব থিংসের (আইওটি) সমন্বয়ে। পুরো পৃথিবী চলছে প্রতিযোগিতার মধ্যে, আর প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের প্রয়োজন দ্রুত সমস্যা চিহ্নিত এবং সমস্যা সমাধান সক্ষমতা। আর এক্ষেত্রেই সহায়তা করে আইওটি এবং অটোমেশন

আমি মনে করি পরবর্তী যুগটি আমাদের শিল্প খাতের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কেননা সময়ের মধ্যে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে খাতের গুরুত্ব অনুধাবন করিয়ে উদ্ভাবনী দক্ষতা উন্নয়ন করে তাদের হাতে হস্তান্তর করাটাই আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে। আর যাত্রায় আমাদের উদারতা, নতুনকে গ্রহণ করে নেয়ার মানসিকতা, একাগ্রতা এবং দুটি ভিন্ন জেনারেশনের মধ্যে মেলবন্ধন তৈরি করার প্রচেষ্টা বড় ভূমিকা পালন করতে পারে

বর্তমানে স্কয়ার নেই, এমন কোনো খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণ বা সম্পূর্ণ নতুন কোনো উদ্যোগ গ্রহণের পরিকল্পনা আছে কি ?

ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করা হয় সময়, ভবিষ্যতের চাহিদা এবং বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জগুলো বিশ্লেষণের মাধ্যমে। আর প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসা ব্যবস্থার মধ্যে আমি মনে করি যে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পরই তা জানা উচিত। অগ্রগতির দিক দিয়ে স্কয়ার কখনো থামেনি, থামবেও না। দেশের পণ্য এবং কর্মসংস্থানের চাহিদা মেটানোর জন্য স্কয়ারকে যা করা দরকার এসবই আমাদের পরিকল্পনার মাঝে আছে এবং থাকবে

পোশাক বস্ত্র খাতে বিনিয়োগে স্কয়ারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাই

আজকের স্কয়ারের সঙ্গে আপনি ১০ বছর আগের স্কয়ারকে যদি মেলাতে যান, উন্নয়ন আর পরিবর্ধন ছাড়া আপনার চোখে আর কিছু পড়বে না। আমাদের পরিধি সময়ের সঙ্গে বেড়েছে এবং একইভাবে ভবিষ্যতে বাড়বে। আমরা প্রতিনিয়ত কর্মসংস্থান তৈরির মাধ্যমে আর্থসামাজিক অবকাঠামো প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করব। পুরো বিশ্ব আজ গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের শিকার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা টেকসই জ্বালানি এবং পরিবেশবান্ধব বা গ্রিন সাপ্লাই চেইনের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। সেই সঙ্গে আমাদের কাস্টমারদের টেকসই নীতিগুলো পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আশা করি ভবিষ্যতে আমরা আমাদের একটি পরিপূর্ণ টেকসই কোম্পানি হিসেবে বিশ্ববাজারে তুলে ধরতে পারব

স্কয়ার বহুজাতিক কোম্পানি হওয়ার পথে

বাষট্টি বছর আগে পাবনার আতাইকুলায় জন্ম। শুরুতে সাধারণ সর্দিকাশির সিরাপ বানিয়ে হাতেখড়ি। সেই স্কয়ার আজ দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বহু আগেই নিজেদের পণ্য ভিনদেশে নিয়ে গেছে তারা। এখন আরেক ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান হতে চায় স্কয়ার গ্রুপ

চার বন্ধুর হাত ধরে ১৯৫৮ সালে যাত্রা শুরু করলেও স্কয়ারের মূল কান্ডারি হচ্ছেন স্যামসন এইচ চৌধুরী। তাঁর প্রয়াণের পর সন্তানেরাই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন দেশের অন্যতম পুরোনো এই প্রতিষ্ঠানকে। নতুন করে যুক্ত হয়েছেন নাতিনাতনিরা। স্কয়ারকে বহুজাতিক কোম্পানি করার উদ্যোগটি তাঁরাই নিয়েছেন। সে জন্য প্রায় ১৭০ কোটি টাকা বিনিয়োগে আফ্রিকার দেশ কেনিয়ায় গড়ে উঠছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের কারখানা। চলতি বছরই কারখানাটির কার্যক্রম শুরু হবে। ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা করছেন প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তারা

মাত্র ২০ হাজার টাকা মূলধন নিয়ে স্কয়ারের জন্ম। সেই স্কয়ারের বার্ষিক লেনদেনের পরিমাণ বর্তমানে ১১ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। ওষুধ দিয়ে শুরু করলেও স্কয়ার গ্রুপের ব্যবসা বর্তমানে আটটি খাতে বিস্তৃতস্বাস্থ্যসেবা; ভোগ্যপণ্য; বস্ত্র; মিডিয়া, টিভি তথ্যপ্রযুক্তি; নিরাপত্তা সেবা; ব্যাংক ইনস্যুরেন্স; হেলিকপ্টার কৃষিপণ্য। তাদের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২০। কর্মী বাহিনী ৫৫ হাজারের বেশি

স্কয়ারের শূন্য থেকে শীর্ষে পৌঁছার দীর্ঘ যাত্রা ভবিষ্যৎ নিয়ে গত সপ্তাহে কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম দুই কর্ণধার তপন চৌধুরী অঞ্জন চৌধুরীর সঙ্গে। তপন চৌধুরী বর্তমানে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং অঞ্জন চৌধুরী স্কয়ার টয়লেট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। অঞ্জন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের স্বপ্ন, স্কয়ার বাংলাদেশি বহুজাতিক কোম্পানি হবে। বিশ্বের মানুষ এটিকে বাংলাদেশি কোম্পানি হিসেবে চিনবে। সে জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।







স্বপ্নদ্রষ্টা স্যামসন এইচ চৌধুরী

১৯৫২ সালে ডাক বিভাগের চাকরি ছেড়ে বাবার হোসেন ফার্মেসিতে বসতে শুরু করেন স্যামসন এইচ চৌধুরী। বছর চারেক পর বাবার কাছ থেকে টাকা ধার করে আতাইকুলাতেই ইসন্সস (ইয়াকুব অ্যান্ড সন্স) নামে ছোট ওষুধ কোম্পানি করেন তিনি। সেটিকে বড় করতে তিন বন্ধুকে সঙ্গে নেন। কাজী হারুনূর রশীদ, পি কে সাহা রাধাবিন্দ রায়কে নিয়ে ১৯৫৮ সালে স্কয়ার নামে ওষুধ কোম্পানি করেন স্যামসন এইচ চৌধুরী। তখন তাঁদের মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ২০ হাজার টাকা

চারজনের সমান বিনিয়োগ বলে প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করা হয় স্কয়ার। ১৯৭১ সালে রাধাবিনোদ রায় নিজের মালিকানার অংশ ছেড়ে দেন। হারুনূর রশিদ পি. কে. সাহার মালিকানার অংশ এখনো রয়ে গেছে। চার বন্ধু মিলে কোম্পানিটি গড়ে তুললেও নেতৃত্বে ছিলেন স্যামসন এইচ চৌধুরী। শুরুতে পাবনায় নিজ বাড়ির কাছেই কোম্পানির কারখানা করা হয়। শুরুতে স্কয়ার ফার্মা সিরাপজাতীয় ওষুধ তৈরি করত। ধীরে ধীরে সময়ের সঙ্গে কোম্পানির পরিসরও বড় হতে থাকে

স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৯৭৪ সালে এসে বহুজাতিক কোম্পানি জনসন অ্যান্ড জনসনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় স্কয়ার। ওই সময় দেশের ওষুধের বাজারে একচেটিয়া প্রভাব ছিল বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর। জনসনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর দেশে কোম্পানিটির ওষুধ উৎপাদন শুরু করে স্কয়ার। তাতে ওষুধের বাজারে শক্ত ভিত তৈরি হয় স্কয়ারের। ১৯৮২ সালে এসে এরশাদ সরকারের সময় বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে দেশীয় কোম্পানিগুলোর চুক্তি সনদ বাতিল করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি দেশের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় ওষুধ বা এসেনশিয়াল ড্রাগসের একটি তালিকা তৈরি করে। তত দিনে বিদেশি কোম্পানি জনসনের জন্য ওষুধ তৈরি করতে গিয়ে স্কয়ারের সক্ষমতা অনেক বেড়ে যায়। সেই সক্ষমতা দিয়েই ১৯৮৩৮৪ সালের দিকে অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি শুরু করে স্কয়ার। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত স্কয়ার ফার্মা ১৯৯৫ সালে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওতে ১০ লাখ শেয়ার ছেড়ে ৯০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল। সে সময় ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যের বা ফেসভ্যালুর শেয়ারের জন্য অধিমূল্য বা প্রিমিয়াম নেওয়া হয় ৮০০ টাকা। সেই ৯০ কোটি টাকার মধ্যে ৫০ কোটি দিয়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গড়ে তোলা হয় স্কয়ার ফার্মার বিশাল কারখানা। বাকি ৪০ কোটি টাকায় তৈরি হয় স্কয়ার টেক্সটাইল

গত ২০১৭১৮ অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্কয়ার ফার্মার সম্পদের পরিমাণ প্রায় হাজার ৭৮২ কোটি টাকার। ২০১৮১৯ অর্থবছরের মুনাফার পর প্রতিষ্ঠানটির সম্পদের পরিমাণ বেড়ে প্রায় হাজার কোটি টাকায় দাঁড়ায়। কোম্পানি তাদের সম্পদমূল্যের হিসাব করেছে ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে। বর্তমান বাজারমূল্য হিসাব করা হলে কোম্পানিটির সম্পদমূল্য ২১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। অথচ ১৯৫৮ সালে মাত্র ২০ হাজার টাকা নিয়ে যাত্রা শুরু করে কোম্পানিটি। সেই ২০ হাজার টাকার কোম্পানি এখন পরিণত হয়েছে ২১ হাজার কোটি টাকার কোম্পানিতে

বর্তমানে বিশ্বের ৪২টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে স্কয়ার। এগুলোর মধ্যে এশিয়ার ১৯টি দেশ, আফ্রিকার ১৩টি, ওশেনিয়া অঞ্চলের ৩টি, মধ্য দক্ষিণ আমেরিকার ৬টি এবং যুক্তরাজ্যের বাজারে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ রপ্তানি করা হয়। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছর স্কয়ার ১৪৫ কোটি টাকার ওষুধ রপ্তানি করেছে। এই আয় তার আগের বছরের চেয়ে প্রায় সাড়ে শতাংশ বেশি

স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের নজর এখন বিদেশে শক্ত অবস্থান গড়ে তোলা। সে লক্ষ্যে এরই মধ্যে আফ্রিকার দেশ কেনিয়ায় কারখানা তৈরি করছে কোম্পানিটি। বছরের শেষে কারখানাটিতে উৎপাদন শুরু করতে চায় স্কয়ার ফার্মা। এর মাধ্যমে কেনিয়াসহ পূর্ব আফ্রিকার ছয়টি দেশের ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার বা সাড়ে ২৫ হাজার েকাটি টাকার ওষুধের বাজার ধরতে চায় তারা

স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী বলেন, কেনিয়ায় কারখানা করতে প্রাথমিকভাবে েকাটি ২০ লাখ ডলার বা ১০০ কোটি টাকার মূলধন বিনিয়োগ করা হয়েছে। ছাড়া কারখানা নির্মাণে ঋণ নেওয়া হয়েছে আরও ৮০ লাখ ডলার। সব মিলিয়ে কেনিয়ায় কারখানায় মোট বিনিয়োগ দাঁড়াবে কোটি ডলার বা ১৭০ কোটি টাকা

যুদ্ধের সময় কারখানা বন্ধ

স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হলে পাবনায় স্কয়ারের কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। নিরাপত্তার খাতিরে গ্রামের দিকে চলে যায় স্যামসন এইচ চৌধুরীর পরিবার। তখন কয়েকজন পাঠান নিরাপত্তাকর্মী কৌশল করে পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে কারখানাটি নিজেদের বলে দাবি করে। তাদের কৌশলের কারণেই কারখানার কোনো ক্ষতি হয়নি

সেই গল্প বললেন তপন চৌধুরী, ‘পাবনা শহরে ঢোকার আগে আমার দাদুবাড়ি। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় সে বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় পাকসেনারা। শহরে আমাদের বাড়িটিও গানপাউডার দিয়ে পুড়িয়ে দিল তারা। আমরা প্রত্যন্ত এলাকার দিকে চলে গেলাম। আমার বড় ছোট ভাই ভারত চলে গেল। বোন বাবামাকে নিয়ে দেশে রয়ে গেলাম।তিনি বলেন, ‘পাঠান নিরাপত্তারক্ষীদের সর্দার ছিলেন মোল্লা খান। তাঁর নাতিরা বর্তমানে কারখানায় কাজ করছেন। সেই মোল্লা খান আমাদের ১৯৭১ সালের মে মাসের দিকে পাবনায় নিয়ে আসেন। কারখানার উৎপাদনও শুরু হয়।

অবশ্য স্বাধীনতাযুদ্ধের আগেও একবার স্কয়ারের কারখানা বন্ধ হয়েছিল। আইয়ুব খানের শাসনামলে পাকিস্তান আর্মির সহায়তায় স্কয়ারের কারখানায় তালা ঝুলিয়ে দেয় সরকার। তখন অভিযোগ ছিল, কারখানার ভেতরে রাষ্ট্রবিরোধী কাজকর্ম হচ্ছে। তখন কিছুদিন পালিয়ে ছিলেন স্যামসন এইচ চৌধুরী। পরে তিনি সরকারকে বোঝাতে সক্ষম হন, কারখানায় অনৈতিক কাজ হয় না। তখন কারখানা খুলে দেয় সরকার

অবিশ্বাস ভাঙা বড় চ্যালেঞ্জ

বগুড়ার খঞ্জনপুর বোর্ডিং স্কুলে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন তপন চৌধুরী। তারপর পাবনা জেলা স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে ভর্তি হন ঢাকার নটর ডেম কলেজে। পরে পড়াশোনা করতে চলে যান যুক্তরাজ্যে। সেখানেই থেকে যেতে চেয়েছিলেন, তবে বিশেষ পরিস্থিতির কারণে ১৯৭৭ সালে দেশে ফিরে আসেন। তপন চৌধুরী বললেন, ‘বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন ছোট ভাই অঞ্জন চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করছে। সে বলল, “আমি যদি না যাই, তাহলে তাকেই পড়াশোনা বাদ দিয়ে দেশে ফিরে যেতে হবে।পরে বাধ্য হয়ে ফিরলাম।

অবশ্য ছোটবেলা থেকেই স্কয়ারের ওষুধের কারখানায় যাতায়াত ছিল তপন চৌধুরীর। বললেন, ‘ওষুধের কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য বাবাকে প্রায়ই তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে থাকতে হতো। ফলে বাবাকে আমরা খুব বেশি সময় পেতাম না। মায়ের কাছেই আমরা বড় হয়েছি। তবে বাবা যখন বাড়ি থাকতেন, তখন তাঁর সঙ্গে কারখানায় যেতাম। একটু যখন বড় হলাম, তখন স্কুল ছুটির পর একা একাই কারখানায় চলে যেতাম। অনেকক্ষণ কাজ করতাম।দেশে ফিরে স্কয়ার ফার্মার বিপণন বিভাগের দায়িত্ব নিলেন তপন চৌধুরী। শুরুতে সারা দেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন। ফার্মেসিতে গিয়েছেন। চিকিৎসকদের সঙ্গে মিশেছেন। তপন চৌধুরী বললেন, বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠান ওষুধ বানাবে, তখন দেশের অনেক মানুষই বিশ্বাস করতে চাইতেন না। মানুষের এই অবিশ্বাস ভাঙার কাজটি ছিল বেশ চ্যালেঞ্জিং

জুঁই দিয়ে টয়লেট্রিজের যাত্রা

বর্তমানে একাধিক ব্র্যান্ডের নামে টুথপেস্ট থেকে শুরু করে লোশন, শ্যাম্পু, সাবান, হ্যান্ডওয়াশ, ডিটারজেন্ট, ডায়াপার ইত্যাদি তৈরি করছে স্কয়ার টয়লেট্রিজ। তবে তাদের যাত্রা শুরু হয়েছে জুঁই নারকেল তেল তৈরির মাধ্যমে, ১৯৮৮ সালে। স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের বর্তমান েচয়ারম্যান স্যামুয়েল এস চৌধুরীর বড় মেয়ের নাম জুঁই। সেটিকে নারকেল তেলের ব্র্যান্ডের নাম হিসেবে বেছে নেন স্যামসন এইচ চৌধুরী

ওষুধের ব্যবসা থেকে টয়লেট্রিজে আসার কারণ হিসেবে তপন চৌধুরী বললেন, ‘বাবার মাথায় বহু জিনিস ঘুরত। কোনো পণ্য তাঁর মনে ধরলে সেটি তৈরি করার চেষ্টা করতেন। সেই চিন্তা থেকেই টয়লেট্রিজ পরে ফুড বেভারেজ কারখানা করেন বাবা। নারকেল তেল দিয়ে টয়লেট্রিজ শুরুর কারণ হচ্ছে, তখন নারকেল তেল ছিল মেয়েদের বড় দুর্বলতা। সে সময়কার মেয়েরা বিশ্বাস করতেন, নারকেল তেল মাথায় দিলে চুল কালো ঘন হয়। যদিও বিষয়টির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা পাওয়া মুশকিল। যাহোক, নারীদের দুর্বলতার কারণেই খাঁটি নারকেল তেল তৈরি করা শুরু করলেন বাবা। সেই জুঁই ব্র্যান্ডের তেল বাজারে বিক্রি শুরু হলো।

বস্ত্রকল হাসপাতালে হাতেখড়ি

নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশে তৈরি পোশাকশিল্প গড়ে উঠতে শুরু করে। তখন স্পিনিং মিল করার সিদ্ধান্ত নেয় স্কয়ার। পুঁজিবাজারে স্কয়ার ফার্মার শেয়ার ছেড়ে ৯০ কোটি টাকা তোলে তারা। তার মধ্যে ৫০ কোটি টাকা দিয়ে কালিয়াকৈরে স্কয়ার ফার্মার নতুন কারখানা স্থাপন বাকি ৪০ কোটি টাকা দিয়ে স্পিনিং মিল করা হয়। বর্তমানে গাজীপুর, ময়মনসিংহের ভালুকা হবিগঞ্জে স্কয়ারের বস্ত্র পোশাক কারখানা রয়েছে। দুই যুগের ব্যবধানে স্কয়ার বর্তমানে দেশের অন্যতম বৃহৎ বস্ত্রকল

তপন চৌধুরী বলেন, ‘শেয়ারবাজার থেকে টাকা ওঠানোর আগে বাবা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যাঁরা স্কয়ার ফার্মার শেয়ার কিনবেন, তাঁদের টেক্সটাইলসের শেয়ার বিনা মূল্যে দেবেন। কিন্তু প্রক্রিয়াটি আটকে দেয় সরকার। তখন বাবা উচ্চ আদালতে মামলা করেন। অবশেষে স্কয়ার টেক্সটাইলসের শেয়ার বিনা মূল্যে দেওয়ার পথ পরিষ্কার হয়।

স্কয়ার টেক্সটাইল লিমিটেড বাংলাদেশের একটি অম্যতম প্রতিষ্ঠান। স্কয়ার টেক্সটাইল লিমিটেড ১৯৯৪ সালে গাজীপুরের কাশিমপুরের শারদাগঞ্জে প্রথম টেক্সটাইল ইউনিট লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করে। প্রথম ইউনিট প্রতিষ্ঠার চার বছর পর ১৯৯৮ সালে তাদের দ্বিতীয় ইউনিট চালু করে এবং ২০০০ সালে তাদের তৃতীয় ইউনিট প্রতিষ্ঠা করেন

স্কয়ার টেক্সটাইল লিমিটেড সুতা তৈরির জন্য ২০০০ সালে তাদের স্পিনিং মিল চালু করে যার বিনিয়োগ ছিল ২০ মার্কিন ডলার। স্পিনিং মিলের দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ১৮,৫০০ কেজি। 

স্কয়ার ফ্যাশনস লিমিটেডের কাজ ২০০১ সালে শুরু করা হয় এবং ২০০২ সালের জুন হতে উৎপাদন শুরু হয়েছিল। এর প্রতিষ্ঠাকালে বিনিয়োগ ছিল ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। পণ্য রপ্তানির জন্য প্রধান দুটি দেশ হলো ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

স্কয়ার ফ্যাশনস লিমিটেডের পণ্যঃ টি-শার্ট এবং পোলো শার্ট, পায়জামা, ক্রীড়া পোশাক, আন্ডার গার্মেন্টস, পুরুষ এবং মহিলাদের পোশাক, বাচ্চাদের পোশাক ইত্যাদি

উৎপাদন ক্ষমতা (প্রতি দিন) টি-শার্ট ,৪০০ ডজন, পোলো শার্ট ,২০০ ডজন, মহিলা শিশুদের পোশাক ,৪০০ ডজন এবং আন্ডার গার্মেন্টস ,০০০ ডজন

কারখানার মোট ক্ষেত্রফল ২১০,০০০ বর্গফুট। 

উচ্চমানের কাপড় তৈরি করছে স্কয়ার ডেনিম

কথায় আছে ভুল থেকে শিক্ষা নিলে যেমন সাফল্য আসে, তেমনি প্রতিযোগিতপূর্ণ বাজারে ব্যবসার দুর্বল জায়গা চিহ্নিত করে সেই জায়গা উন্নত করা গেলে সাফল্য আসবেই। আর এর সঙ্গে থাকা চাই ব্যবসায়িক সততা সুনাম। এসব কিছুকে ধারণ করে এগিয়ে যাচ্ছে দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প গোষ্ঠী স্কয়ার গ্রুপ। সম্প্রতি এই শিল্প গোষ্ঠীর নতুন সংযোজন রাজধানী ঢাকা থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরে হবিগঞ্জে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে গড়ে ওঠা স্কয়ার ডেনিম লিমিটেডের ডেনিম ফেব্রিকস উত্পাদনের বিশাল কারখানা দেখে এমনটাই মনে হয়েছে

বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জের অলিপুরে প্রায় ৩০০ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে কারখানাটি। তুরস্কের কারিগরি সহায়তা নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে আন্তর্জাতিক মানের বর্জ্য শোধনাগার, নির্দিষ্ট তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থাসহ পুরো পরিবেশবান্ধব কারখানা। বস্ত্র উত্পাদনের বিভিন্ন ধাপে আধুনিক প্রযুক্তিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ছাড়া নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থার জন্য রয়েছে আট মেগাওয়াটের ক্যাপটিভ জেনারেটর। বিদ্যুৎজনিত কারণে অগ্নিকাণ্ড থেকে সুরক্ষায় ব্যবহার করা হয় অত্যাধুনিক বাস বার ট্রানটিন্ট প্রযুক্তি। 

কারখানায় প্রায় ৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। এত বড় বিনিয়োগ সাধারণ মানের ডেনিম কাপড়ের জন্য নয়। বরং তুলনামূলক উচ্চমূল্যের কাপড় এখানে তৈরি করা হয়। 

কারখানার বিশেষত্ব হলো কাপড়ের ফিনিশিং। জন্য উচ্চমূল্যের যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে। তারা জানায়, ডেনিমের ফিনিশিংয়ে বাংলাদেশ তুলনামূলক দুর্বল। দীর্ঘদিন ধরেই স্কয়ার ডেনিম সুতা উৎপাদন করে আসছে। ফলে নিজস্ব সুতা থেকে ফেব্রিকস বা কাপড় তৈরি তাদের জন্য সহজ হয়েছে। গত বছরের জুলাই থেকে উৎপাদনে আসা কারখানাটি থেকে ইতিমধ্যে নামকরা ব্র্যান্ড এইচএন্ডএম  গার্মেন্টের অর্ডার সরবরাহ করাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এই কারখানা থেকে ডেনিমের কাপড় সংগ্রহ করছে। কারখানার তৈরি করা কাপড়ের প্রশংসা করেছে নামকরা ব্র্যান্ড নেক্সট সিএন্ডএ

ডেনিমে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী মূলত চীন, ভারত ইন্দোনেশিয়া। তবে ধরনের পণ্য কাপড় উৎপাদনে এশিয়ার অন্যতমজায়ান্টতুরস্ক। উচ্চমূল্যের ডেনিম কাপড় উৎপাদনে তাদের বিশেষ সুনাম রয়েছে। ডেনিমে তাদের ব্যবহার করা যন্ত্রপাতি, প্রযুক্তি কিংবা কারিগরি জ্ঞান উচ্চমূল্যের পণ্য তৈরিতে দেশটির অবস্থান তৈরি করেছে। বাংলাদেশও ধীরে ধীরে সেই পথে হাঁটছে। দেশের বেশ কিছু কারখানা এখন তাদের কাছ থেকে কারিগরি সহায়তা নিচ্ছে। গার্মেন্ট তথা ডেনিম পণ্য উৎপাদনে চীন শীর্ষে থাকলেও দেশটি ধীরে ধীরে খাত থেকে সরে যাচ্ছে। দেশের উদ্যোক্তারা মনে করছে, এটি তাদের জন্য বিরাট সুযোগ সৃষ্টি করেছে

দেশে প্রতি বর্গমিটার (ইয়ার্ড) ডেনিম কাপড়ের গড় দাম আড়াই থেকে তিন ডলার। কিন্তু স্কয়ারের তৈরি ডেনিম কাপড় এর চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়। ধীরে ধীরে এখানকার তৈরি ডেনিম কাপড় শীর্ষস্থানীয় ডেনিমের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে। 

কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা বছরে ২৫ লাখ মিটার।বর্তমানে ১৫ লাখ মিটার উৎপাদিত হচ্ছে। আগামী দুই বছরে কারখানাটি উৎপাদন ক্ষমতার পুরো ব্যবহার করতে পারবে। ছাড়া আগামী নভেম্বর নাগাদ সেখানে আরেকটি ইউনিট স্থাপন করা হবে

এই কারখানায় প্রায় সাড়ে ৯০০ শ্রমিক কাজ করে। আর এর ৩০ শতাংশই নারী শ্রমিক বলে দাবি করেন তিনি

পান্থপথে স্কয়ার হাসপাতালের জায়গায় হোটেল শপিং মল করার পরিকল্পনা ছিল। সে জন্য থাইল্যান্ডের সেন্ট্রালের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সেই রাস্তায় হাঁটেনি স্কয়ার। থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালের নকশাকারী প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের স্থপতিদের দিয়ে স্কয়ার হাসপাতালের নকশা করা হয়। স্কয়ার হাসপাতাল বর্তমানে লাভজনক প্রতিষ্ঠান। তবে সেই মুনাফা উদ্যোক্তারা নেন না। পুনর্বিনিয়োগ করেন। নিজেরাও হাসপাতালটি থেকে পয়সা দিয়ে চিকিৎসা নেন। শুরু থেকেই এই নিয়মে চলছে বলে জানালেন তপন চৌধুরী

তপন চৌধুরী বলেন, ‘দেশে তখন বেসরকারি খাতে ভালো মানের হাসপাতাল ছিল না। মানুষজন উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারত, থাইল্যান্ড মালয়েশিয়ায় যেত। তো দেশের মানুষের উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল করার সিদ্ধান্ত নিলাম। বাবাকে যখন বললাম, তখন তিনি বেশ উৎসাহ দিলেন। সহযোগিতাও করলেন।

মূল কেন্দ্রবিন্দু মা

২০১২ সালের জানুয়ারি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থা মারা যান স্যামসন এইচ চৌধুরী। স্যামুয়েল এস চৌধুরী, অঞ্জন চৌধুরী রত্না পাত্র বারিধারায় থাকেন। তাঁদের মা অনিতা চৌধুরীও সেখানেই থাকেন। আর তপন চৌধুরী থাকেন ইন্দিরা রোডে তাঁদের পুরোনো বাড়িতে

তপন চৌধুরী বলেন, ‘মা আমাদের পরিবারের কমান্ড ইন চিফ। প্রতিদিন দেখা না হলেও দিনে অন্তত দুবার তাঁর সঙ্গে কথা হয়। প্রতি শুক্রবার বারিধারায় চলে যাই। মায়ের সঙ্গে গল্প করি। সবাই একসঙ্গে দুপুরের খাওয়াদাওয়া করি। বয়স হলেও মা সব বিষয়ে খোঁজখবর রাখেন। দুপুরে মা রান্না করে বাসা থেকে এখনো আমার জন্য খাবার পাঠান

স্যামসন এইচ চৌধুরীর গড়ে তোলা স্কয়ার বেশ ভালোভাবেই সামলে নিচ্ছেন তাঁর তিন ছেলে এক মেয়ে। তারপরও বাবার শূন্যতা অনুভব করেন তাঁরা। তপন চৌধুরী বলেন, ‘যখন বাবার শরীর বেশ খারাপ হয়ে গেল, তখন সবাই তাঁর সঙ্গে ব্যবসায়িক আলাপ করতে নিষেধ করেন। কিন্তু আমরা যখন কঠিন সমস্যায় পড়ে যেতাম, তখন বাবাকে বললে মিনিটের মধ্যে সমাধান করে দিতেন। আসলে দীর্ঘদিন ব্যবসা করার কারণে সবকিছুই ছিল বাবার নখদর্পণে। আমি সরকারের উচ্চপর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেছি। তারপরও যেখানে গিয়েছি, সেখানেই বাবার পরিচয়ে পরিচিত হয়েছি।

আমরা শূন্য থেকে আজকের এই অবস্থানে এসেছি। সে জন্য লম্বা পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। রাতারাতি এই সাফল্য আসেনি। দেশের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে সমর্থন আস্থা দিয়ে বিশ্বাস করায় স্কয়ার আজকের উচ্চতায় পৌঁছেছে। এই জিনিসটি আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের ভেতরে দিয়ে যেতে চাই

একনজরে স্কয়ার গ্রুপ

  • প্রতিষ্ঠাকাল: ১৯৫৮ সাল
  • প্রতিষ্ঠাতা: স্যামসন এইচ চৌধুরী
  • প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা: ২০
  • মোট কর্মী: ৬০০০০
  • বার্ষিক লেনদেন: ১৫০০০ কোটি টাকা
  • রপ্তানি গন্তব্য: ৫০-এর বেশি
  • দেশ রপ্তানি আয়: ,৮৭১ কোটি টাকা
  • শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি: ২টি (স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস স্কয়ার টেক্সটাইলস)
  • কোন খাতে ব্যবসা: স্বাস্থ্যসেবা; ভোগ্যপণ্য; বস্ত্র; মিডিয়া, টিভি তথ্যপ্রযুক্তি; নিরাপত্তা সেবা; ব্যাংক ইনস্যুরেন্স; হেলিকপ্টার কৃষিপণ্য

স্কয়ারের যত প্রতিষ্ঠান:

. স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস,

. স্কয়ার টেক্সটাইলস,

. স্কয়ার ফ্যাশনস,

. স্কয়ার ইয়ার্ন,

. স্কয়ার হেস্ককন,

. স্কয়ার হসপিটাল,

. স্কয়ার টয়লেট্রিজ,

. স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ,

. স্কয়ার সিকিউরিটিজ ম্যানেজমেন্ট,

১০. ফার্মা প্যাকেজেস,

১১. মিডিয়াকম,

১২. স্কয়ার এয়ার,

১৩. স্কয়ার ইনফরমেটিকস,

১৪. এজেস সার্ভিস,

১৫. স্কয়ার ফ্যাশন ইয়ার্ন,

১৬. মাছরাঙা কমিউনিকেশনস,

১৭. স্কয়ার অ্যাগ্রো ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড প্রসেসিং,

১৮. সাবাজপুর টি কোম্পানি,

১৯. স্কয়ার ডেনিম এবং

২০. স্কয়ার অ্যাপারেলস

শ্রমিকের অংশীদারত্ব আমাদের বড় শক্তি: অঞ্জন চৌধুরী

সুনাম প্রতিষ্ঠানটির প্রতি শ্রমিকদের অংশীদারত্ব স্কয়ারের আজকের অবস্থানের পেছনে সবচেয়ে বড় শক্তি হিসেবে কাজ করেছে বলে মনে করেন অঞ্জন চৌধুরী। তিনি বলেন, স্কয়ারে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের কাছে এটি চাকরির চেয়ে বাড়তি কিছু। গাড়িচালক থেকে শুরু করে উৎপাদনপ্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকেই প্রতিষ্ঠানকে নিজের মনে করেন। নানা দুর্যোগে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ রক্ষায় তাই শ্রমিকেরা সবার আগে এগিয়ে এসেছেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিদের হাত থেকে আমাদের কারখানাটি বাঁচিয়েছিলেন সে সময় কারখানায় কর্মরত একজন দারোয়ান। যিনি ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানি পাঠান। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও উনি আমাদের ছেড়ে যেতে রাজি হননি। আমাদের সঙ্গেই থেকে গেছেন দেশে। উনি মারা যাওয়ার পর ওনার ছেলে আমাদের সঙ্গে কাজ করেছেন। এখন করছেন তাঁর নাতি। এভাবে অনেক অনেক কর্মীর পরিবার বংশপরম্পরায় স্কয়ারের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত রেখেছেন। আমরাও মালিক-শ্রমিক ভেদাভেদ ভুলে এক পরিবারের সদস্য হিসেবে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে সামনে এগোনোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাই ভালো থাকলে প্রতিষ্ঠান ব্যক্তি হিসেবে আমরাও ভালো থাকব

সততা, নিয়মানুবর্তিতা, মানুষের প্রতি সম্মানএসব স্কয়ারের অগ্রযাত্রার মূলমন্ত্র বলে জানান অঞ্জন চৌধুরী। কারণে দেশে-বিদেশে মানুষ স্কয়ার গ্রুপকে সমীহ করে। তিনি বলেন, ‘বাবা প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনার পাশাপাশি পারিবারিকভাবে আমাদের মধ্যে এমন কিছু মূল্যবোধ তৈরি করে দিয়ে গেছেন, যেগুলো আমরা প্রতিনিয়ত অনুসরণ করে চলেছি। কারণে ব্যবসার অনৈতিক কোনো পথে আমরা কখনো পা বাড়াইনি। আমরা বিশ্বাস করি, সরকার, দেশের মানুষ, শ্রমিককাউকে না ঠকিয়ে এবং অসৎ পন্থা অবলম্বন না করেও ব্যবসায় উন্নতি করা সম্ভব। তারই দৃষ্টান্ত স্কয়ার গ্রুপ। গর্ব মূল্যবোধ আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যেও বপন করে দিয়ে যেতে চাই।

বর্তমানে অঞ্জন চৌধুরী শিল্প গ্রুপের অধীনে থাকা স্কয়ার টয়লেট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৫৮ সালে যাত্রা শুরু করা স্কয়ারের ব্যবসার সঙ্গে অঞ্জন চৌধুরী যুক্ত হন ১৯৯১ সালে। শুরুতেই তিনি দায়িত্ব পান স্কয়ার টয়লেট্রিজের। সে সময় প্রতিষ্ঠানটির পণ্যের মধ্যে ছিল জুঁই নারকেল তেল আর মেরিল শ্যাম্পু। অঞ্জন চৌধুরী বলেন, ‘ব্যবসায় যুক্ত হওয়ার পর আমার দায়িত্ব ছিল স্কয়ারের নিজস্ব পরিচিতির বাইরে আলাদা ব্র্যান্ড হিসেবেমেরিলকে পরিচিত করা। সেটি করতে গিয়ে দেশের আনাচে-কানাচে ঘুরেছি। গ্রামে-গঞ্জে গিয়ে ছোট ছোট দোকানে মেরিলকে পরিচিত করেছি। এমনও হয়েছে যখন মেরিলের কথা বলতাম, দোকানদারেরা কথাই বলতে চাইত না। যখন বলতাম, এটি স্কয়ারের কোম্পানি, তখন তাঁরা কিছুটা নমনীয় হতেন। স্কয়ারের সুনামের কারণে এখনো অনেক ব্যবসা করতে গিয়ে আমাদের কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়। স্কয়ারের সুনামের সঙ্গে বাবার (প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান স্যামসন এইচ চৌধুরী) নামটিও দেশের মানুষের কাছে স্মরণীয় হয়ে আছে। এখনো কোথাও গেলে আমাদের লোকে অনেক বেশি মূল্যায়ন করে স্যামসন এইচ চৌধুরীর ছেলে হিসেবে। তাই আমরা কোনো কাজ করার আগে স্কয়ার বাবার সুনামের বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি।

গোপনে আবেদন প্রত্যাহার

২০০৭ সালে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টার দায়িত্ব পান স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী। সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি স্কয়ারের দায়িত্ব ছেড়ে দেন। তপন চৌধুরী উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার বেশ আগে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছিল স্কয়ার গ্রুপ। সেই আবেদন পড়ে ছিল বিদ্যুৎ-জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে

তপন চৌধুরী উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পান বিদ্যুৎ-জ্বালানি মন্ত্রণালয়সহ আরও বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের। এরই মধ্যে একদিন ছেলেকে (তপন চৌধুরী) না জানিয়ে মন্ত্রণালয়ে গিয়ে তৎকালীন বিদ্যুৎসচিবের সঙ্গে দেখা করে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের আবেদনটি প্রত্যাহার করে নেন প্রয়াত স্যামসন এইচ চৌধুরী। ছেলেকে না জানিয়ে আবেদন প্রত্যাহারের বিষয়টি তৎকালীন প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন আহমদকে অবহিত করেন। কারণ, স্যামসন এইচ চৌধুরী মনে করেছিলেন, ছেলে যে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে, সেই মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন নিলে তাতে স্বার্থের সংঘাত হতে পারে। নানা প্রশ্ন দেখা দিতে পারে। আবেদন প্রত্যাহার করে নেওয়ার বেশ কিছুদিন পর ঘটনা প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে জানতে পেরেছিলেন তপন চৌধুরী। এরপর স্কয়ার গ্রুপ আর কখনো বিদ্যুতের ব্যবসায়ও আগ্রহী হয়নি। তপন চৌধুরী বলেন, ‘উপদেষ্টা হওয়ার পর বাবা আমাকে কখনো দিনের বেলায় ফোনও করতেন না, আমার সঙ্গে ব্যবসায়িক কোনো আলাপও করতেন না। বাসায় ফিরলে পারিবারিক কথাবার্তাই হতো তাঁর সঙ্গে। বাবা ছিলেন মূল্যবোধের বিষয়ে একেবারে আপসহীন।

বিনা পয়সায় শেয়ার

১৯৯৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। ওই সময় কোম্পানিটি প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওতে ১০ লাখ শেয়ার ছেড়ে বাজার থেকে ৯০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। যার মধ্যে ৫০ কোটি টাকায় গাজীপুরে গড়ে তোলা হয় স্কয়ার ফার্মার বিশাল কারখানা। আর বাকি ৪০ কোটি টাকায় গড়ে তোলা হয় বস্ত্র খাতের কোম্পানি স্কয়ার টেক্সটাইল। স্কয়ার ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী বলেন, আইপিও ছাড়ার সময় কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ঘোষণা দেন, স্কয়ার ফার্মার শেয়ার যাঁরা পাবেন, পরবর্তীকালে তাঁদের বিনা পয়সায় স্কয়ার টেক্সটাইলের শেয়ারও দেওয়া হবে। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। এক কোম্পানির শেয়ারের সঙ্গে অন্য কোম্পানির শেয়ার দেওয়ার আইনি বিধান তখন ছিল না। তাই অনেকেই তখন কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান স্যামসন এইচ চৌধুরীকে পরামর্শ দিলেন বিনিয়োগকারীদের বিনা পয়সায় শেয়ার না দেওয়ার। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের দেওয়া প্রতিশ্রুতির কিছুতেই বরখেলাপ করতে রাজি হননি তিনি। তাই আদালতের শরণাপন্ন হন। আদালতে মামলা করে সেই মামলায় জিতে স্কয়ার ফার্মার শেয়ারধারীদের বিনা পয়সায় স্কয়ার টেক্সটাইলের শেয়ার দেওয়া হয়

২০ কোটি টাকা বিনিয়োগ

২০১৯ সালজুড়ে শেয়ারবাজারে টানা দরপতন ঘটতে থাকলে তাতে স্কয়ার ফার্মারও শেয়ারের দাম অনেক নিচে নেমে যায়। কোম্পানির আর্থিক ভিত্তির সঙ্গে তা মোটেই সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। তাই প্রতিষ্ঠানটির চার উদ্যোক্তা পরিচালক মিলে বাজার থেকে ১২ লাখ শেয়ার কেনার ঘোষণা দেন। তাতে তাঁদের ব্যয় হয় প্রায় ২০ কোটি টাকা। বিষয়ে স্কয়ার ফার্মার পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা আমাদের কোম্পানির ফান্ডামেন্টাল বা মৌলভিত্তি সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জানি। তাতে আমাদের মনে হয়েছে, কোম্পানিটির শেয়ারের দাম এত নিচে নামার কোনো কারণ নেই। আমরা আমাদের কোম্পানি নিয়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। তাই দাম অযৌক্তিক পর্যায়ে নেমে যাওয়ায় আমরা শেয়ার কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

ফোর্বসের তালিকায় স্কয়ার

যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা-বাণিজ্যবিষয়ক সাময়িকী ফোর্বসের এশিয়ার সেরা ২০০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় তিন বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান জায়গা পেয়েছে। বাংলাদেশের এই তিন প্রতিষ্ঠান হচ্ছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, রেনাটা ফার্মাসিউটিক্যাল ফরচুন শুজ।

  তালিকায় এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২০০ পাবলিক কোম্পানিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাদের বার্ষিক পণ্য বিক্রির মূল্যমান বিলিয়ন বা ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের নিচে। তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর 'ব্যতিক্রমী করপোরেট পারফরম্যান্সের রেকর্ড' আছে বলে ফোর্বসের দাবি

 বাংলাদেশি তিন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রথমেই আছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। ফোর্বস জানায়, স্কয়ারের বার্ষিক বিক্রির পরিমাণ ৫১ কোটি ২০ লাখ ডলার। তাদের নিট আয় ১৫ কোটি ডলার। কর্মীর সংখ্যা হাজার ২৩৪

তালিকায় এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২০০ পাবলিক কোম্পানিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাদের বার্ষিক পণ্য বিক্রির মূল্যমান বিলিয়ন বা ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের নিচে। তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর 'ব্যতিক্রমী করপোরেট পারফরম্যান্সের রেকর্ড' আছে বলে ফোর্বসের দাবি

 তালিকার তথ্যমতে, বাংলাদেশি কোম্পানি স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের বাজারমূল্য ১৭১ দশমিক কোটি ডলার, রেনাটার ১০৭ দশমিক কোটি ডলার আর ফরচুন শুজের কোটি ৮০ লাখ ডলার। 

 বিশ্বের অন্যান্য তালিকার মতো এখানেও চীনা কোম্পানিগুলোর প্রাধান্য দেখা যায়। ২৩টি চীনা কোম্পানি এই তালিকায় স্থান পেয়েছে। ছাড়া জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, তাইওয়ান ইন্দোনেশিয়ার বেশ কিছু কোম্পানি তালিকায় স্থান পেয়েছে। ভারতের মোট ২০টি কোম্পানি এখানে স্থান পেয়েছে। 

 তালিকায় স্থান পাওয়া কোম্পানিগুলোর সর্বোচ্চ বাজারমূল্য ১৩৫০ কোটি ডলার এবং সর্বনিম্ন কোটি ডলারের কম। সর্বোচ্চ বাজারমূল্য নিউজিল্যান্ডের ফিশার অ্যান্ড পে ক্যাল হেলথ কেয়ারের১৩৪৯ দশমিক কোটি ডলার। উল্লেখযোগ্য

 কোম্পানিগুলোর মধ্যে চীনের হ্যাংঝু ওয়ানচান্স টেকের ৩৭৪ কোটি ডলার এবং একই দেশের এসপ্রেসিফ সিস্টেমসের বাজারমূল্য ২৫৮ দশমিক কোটি ডলার। অন্যদিকে সিঙ্গাপুরের অ্যাগ্রিকালচার ফুডসের বাজারমূল্য মাত্র মিলিয়ন বা ৮০ লাখ ডলার




 

 

 

 

Writer:



 

 

 

 

 

 

No comments