Unemployment and employment problems in Bangladesh || বাংলাদেশে বেকারত্ব ও কর্মসংস্থান সমস্যা
বাংলাদেশের বেকারত্ব এবং কর্মসংস্থান সমস্যা
দেশে চাকরি নেই; কেউ নাকি চাকরি পায় না। কিন্তু বিডিজবস-এর মতো ওয়েবসাইটে হাজারে ৫/৬টার বেশি complete profile পাবেন না। ফেসবুকে বেকারত্ব নিয়ে স্ট্যাটাস দেবে, কিন্তু লিঙ্কডইনে কারো প্রোফাইল রেডি না! #Smart_Recruiter/Monster এর নাম হয়তো অনেকেই শুনেই নাই। আরো এরকম দু'একটা ওয়েব সাইট আছে যেখানে বিডিজবসের মতো নিজের প্রোফাইল মেক করা যায় এবং ফরেন অনেক ভালো ভালো কোম্পানিতে এ্যাপ্লাই করা যায়।
কই খাইতে গেলাম, কই ঘুরতে গেলাম, কই আড্ডা দিলাম, কার বৌভাতে গেলাম সবই আপডেট আছে, নিজের সিভিটা আপডেট হয় না! পাঁচটা মেয়েকে পটানোর জন্য ৫০ রকম ফন্দি আঁটে, কিন্তু পাঁচটা আলাদা প্রতিষ্ঠানে পাঁচ রকম চাকরির জন্য ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ একই!
বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ পড়ে, নেয় মার্কেটিং আর হিউম্যান রিসোর্স। কেন? ফাইন্যান্স নিবে না; কারণ অংকে দুর্বল! কে জানি তাকে বুঝাইছে- ফাইন্যান্স পড়তে সাইন্সের হায়ার ম্যাথের মাস্টার্স শেষ করে আসা লাগে। একাউন্টিং পড়বে না কারণ তার ব্যাকগ্রাউন্ড হয় আর্টস না হয় সাইন্স ছিলো! কে জানি তারে বুঝাইছে- এসএসসি বা এইচএসসিতে কমার্সের স্টুডেন্ট না হইলে একাউন্টিং-এ পড়া যায় না! আবার কারা জানি ছড়াইছে দেশে নাকি একাউন্টেন্টের কোন দরকারই নাই; সব কম্পিউটারে করা যায়!
এদিকে মার্কেটিং-এ পড়ে মার্কেটিং-এর কাজ করবে না; হতে চায় ডাইরেক্ট মার্কেটিং ম্যানেজার, এসির বাতাসে বসে বসে কাজ করবে। মার্কেটিং-এর সংজ্ঞা জিগাইলে সুন্দর কইরা উত্তর দিবে, কিন্তু মার্কেটিং করতে গেলে কাস্টমার কি সংজ্ঞা জিগাইবো? এইচআর-এ পড়েও বলতে পারে না এইচআর-এর মূল কাজগুলো কী কী? খালি জানে- মানুষের চাকরি দেওয়া আর চাকরি খাওয়ার জন্য কাগজে সই করতে হয়!
যে কাউরে জিগান- কী চাকরি করতে চায়? হয় বলবে ব্যাংকে কাজ করব, না হয় বলবে মাল্টিন্যাশনালে ক্যারিয়ার গড়ব। কিন্তু ব্যাংকে কী কাজ করতে হয় বা মাল্টিন্যাশনাল-এ কী করা হয় জিগাইলেই লা জবাব। ব্যাংকে বসে মানুষের টাকা গুনে সিল মারা আর মাল্টিন্যাশনাল মানে ম্যালা টাকা- এটুকুর বাইরে কোন ধারণাই নাই!
চাকরি দিতে যাইবেন, কোন যোগ্যতার বলে চাকরি পেতে চাও জিগাইলে উত্তর আসবে- গোল্ডেন ৩.৭৫, গোল্ডেন ৩.৫! কিন্তু এই রেজাল্ট কিভাবে আপনার প্রতিষ্ঠানের কাজে লাগবে সে কথা জিগাইলেই ধরা! ইন্টারভিউ বোর্ড থেকে বের হয়ে এসে বলবে, আজকাল মামা-চাচা না থাকলে চাকরি হয় না, কপাল খারাপ!
অনার্স পাশ করে বসে আছে, চাকরি পাচ্ছে না, চেষ্টাও করে না; কোথায় গেলে স্কিল বাড়াবে- সেই খবর নেই, হুট করে মাস্টার্স-এ ভর্তি হয়ে যাবে (অথচ একমাত্র শিক্ষকতা পেশা ছাড়া মাস্টার্স-এর প্রয়োজন নেই বললেই চলে)। তারপরও চাকরি না পেয়ে আরেকটা মাস্টার্স করবে; এবারও চাকরি নাই! ২/৩টা মাস্টার্স-ওয়ালা লোক সমাজে যে কী পরিমাণ, তা একটা ব্যাংকের সিভি বাছাইয়ের কাজ করলেই টের পাবেন!
এদিকে দেশে যোগ্য লোক পাওয়া কঠিন। জনৈক শ্রদ্ধেয় শিক্ষক একজন শিল্পপতিকে বলেছিলেন, ভারতীয়দের চাকরি না দিয়ে আমাদের দেশের ছেলেদেরকে দিন। উত্তর পেয়েছিলেন, স্কিল-ওয়ালা একটা দেশি ছেলেকে দেখায় দেন, এক্ষুণি চাকরি দিচ্ছি। স্যারকে হতাশ হতে হয়েছে।
শিক্ষার উদ্দেশ্য চোখের পর্দা সরিয়ে দেওয়া, মানুষকে অহংকার মুক্ত করা, কোনটা সঠিক কোনটা সঠিক নয় বুঝতে শেখানো; কিন্তু হয় উল্টোটা। এমবিএ করছে, এখন আর রিক্সার গ্যারেজের মালিক হতে পারবে না। অনার্স শেষ করে ফেলছে, বাপ যে ছোট্ট খামার দিয়ে ৩/৪ ভাইবোনকে লেখাপড়া শিখিয়ে বড় করেছে, সেই খামারকে নিজের বুদ্ধিতে বাড়াতে চেষ্টা করবে না।
দেশে একজন এমবিএ পাশ লোক চাকরিতে যোগ দেয় ১০-১২ হাজার টাকা বেতনে, আর একজন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি মাসে ৩০-৪০ হাজার টাকা আয় করে শহরে একটা আর গ্রামে একটা, মোট দুইটা সংসার চালায়! কিন্তু আমি যেহেতু এমবিএ করে ফেলছি, আমি কি আর ওই ইলেকট্রিক মিস্ত্রি হতে পারবো? কেউ বুঝে না- ইলেকট্রিক মিস্ত্রি না হই, অন্তত পাঁচজন মিস্ত্রির সরদার হতে পারলেও আয়-রোজগার মন্দ হয় না!
এখন চলছে CEO-এর যুগ। ১,০০০ টাকায় একটা ডোমেইন, ৫০০ টাকায় হোস্টিং, ৩০০ টাকায় চার রঙের ভিজিটিং কার্ড, আর ঠেকায় কে? আপনি এখন CEO! কোম্পানিতে লোক ক’জন? মাত্র তিনজন; তাইলে তুমি CEO হইলা ক্যমনে? উত্তর নাই!
কাজের স্কিল নাই; কমিটমেন্ট ঠিক নাই; বিজনেসের প্ল্যান নাই; টাকার কথা তো বাদই দিলাম। দু’দিন পর সব শ্যাষ! ওমনি শুরু হয়ে যাবে- আম্রিকায় সিলিকন ভ্যালি আছে, কিক স্টার্টার আছে, আমাদের কিচ্ছু নাই। আরে বাবা আকিজ সাহেব কোন ভ্যালিতে ছিলেন? স্কয়ার-এর স্যামসন এইচ. চৌধুরী ক্যমনে আগাইছেন?
খালি নাই নাই নাই নাই আর নাই! সত্য কথা বলতে, সমাজে এমন মানুষেরও খুব একটা দরকার নাই!
No comments