IE and Textile | Textile Learning Blog

সেরিকালচার বা রেশম চাষ - Md Shah jamal - IE And Textiles

Breaking News

সেরিকালচার বা রেশম চাষ - Md Shah jamal

 সেরিকালচার বা রেশম চাষ

 সেরিকালচার বা রেশম চাষ



"সেরিকালচার" শব্দের আভিধানিক অর্থ culture of sericine বা "সেরিসিন" নামক এক ধরনের প্রোটিনের লালন। সেরিসিন হলো রেশমের মূল গাঠনিক পদার্থ। অর্থাৎ সেরিসিনের লালনই হচ্ছে সেরিকালচার বা রেশম চাষ। রেশম কীটই ব্যবহারযোগ্য রেশম বস্ত্র তৈরী করে থাকে। 

রেশম চাষের মূল কার্যক্রম তিনটিঃ

                  ক) তুঁত পাতা উৎপাদন;

                  খ) রেশম পোকা (পলু) পালন;

                  গ)রিলিং বা রেশম গুটি হতে সুতা আহরন ;

বাংলাদেশে রেশম চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে রেশম পণ্যের কাঁচামাল অর্থাৎ রেশম গুটি উৎপাদন থেকে শুরু করে গুটি থেকে সুতা উৎপাদন এবং সুতা থেকে বস্ত্র উৎপাদন সহ সকল স্তরে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। নিম্নের উপস্থাপিশ রেশম শিল্পের কার্যক্রম সমূহ তুলে ধরা হলো:


ক) তুঁতপাতা উৎপাদনঃ

তুঁতচাষ রেশম শিল্পের প্রাথমিক পর্যায়।তুঁতপাতাই রেশম পলু পোকার একমাত্র খাদ্য।তুঁত গাছের ইংরেজি নাম মালবেরি। বিভিন্ন ধরনের মালবেরির বৈজ্ঞানিক নাম-Morus alba,Morus indica,Morrus Serrata,Morus lavigata। তু্ঁত গাছ বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। তুঁত গাছ একবার রোপন করলে ২০-২৫ বছর পর্যন্ত পাতার ফলন দেয়। বেশি চাষেরও দরকার হয় না। বছরে ৩/৪ বার খোঁড়,নিরানি ছাঁটাই এবং প্রয়োজনে পানি সেচ দেওয়া লাগে। এতে অন্যান্য ফসলের চেয়ে চাষাবাদ ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ খুবই কম। ছায়াযুক্ত স্থান বাদে বাড়ির আঙিনায়, আনাচে-কানাচে, রাস্তার ধারে, চাষযোগ্য যে কোন জমিতে (যেখানে পানি জমে থাকে না) লাগানো হয়। রেশম চাষীদের তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী রেশন ডিম সরবরাহের লক্ষে রেশম পোকা (পোলু পোকা) পালন করতে হয়। যেহেতু তুঁতপাতা হলো রেশম পোকার একমাত্র খাবার সেজন্য পলু পালনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ তুঁতচাষ রক্ষণাবেক্ষণ আবশ্যক। রেশম চাষীদের বাড়িতে রেশম চাষের সুবিধার্থে বাংলাদেশে রেশম সম্প্রসারণ এলাকার রেশন চাষীদের চাহিদার ভিত্তিতে বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের নার্সারিতে উৎপাদিত তুঁতচাড়া সরবরাহ করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের রেশম চাষে মাঝারি ও বড় উদ্যোক্তা তৈরীর লক্ষ্যে ফার্মিং পদ্ধতিতে রেশম চাষ প্রবর্তন করা হয়েছে। 

রেশম চাষ


খ)রেশম পোকা (পলু) পালনঃ

রেশম চাষ সাধারণত দুই প্রকার। যথা:

১)তুঁত রেশম-এই প্রজাতির রেশম প্রকার প্রধান খাদ্য তুঁত গাছের পাতা বলে এদেরকে  তুঁত রেশম পোকা বা mulberry silkworm বলে।তুঁত রেশম বা বোম্বিক্স মোরি(ইংরেজি:Bombyx mori)আর্থোপোডা পর্বের অন্তর্ভুক্ত ইনসেক্টা শ্রেণীর লেপিডটেরা বর্গের পতঙ্গ।

২)অতুঁত রেশম-অতুঁত রেশম হলো,এন্ডি,মুগা ও তসর।এন্ডিরেশম তৈরি হয়  ফিলোসেমিয়া বর্গের রেশমগুটি থেকে যারা ক্যাস্টর গাছের পাতা খায়। মুগা রেশম তৈরি হয় অ্যান্থেরিয়া বর্গের রেশম গুটি থেকে  যারা কুল, তেজপাতা এবং কর্পূরের পাতা খায় এবং তসর রেশর তৈরি হয়  অ্যানথেরি বর্গভুক্ত রেশম গুটি থেকে যারা অক গাছের পাতা খায়। সচরাচর মালবেরি রেশম সবচেয়ে মূল্যবান হিসাবে বিবেচিত।বাংলাদেশে প্রধানত মালবেরি রেশম চাষ হয়ে থাকে। 


পলু পালন পরিবেশ ও শ্রমবান্ধব। নিজের বাড়িতে পরিবারের সবাই মিলে খুব সহজে পলু পালন করা যায়।পাল পালনের পূর্বে পলু পালনের ঘর ও পলু পালন সরঞ্জামাদি ভালোভাবে পরিষ্কার করে ধৌত করা হয়। পলুঘর বিশোধনের জন্য ব্লিচিং পাউডার 

অত্যান্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে। রেশম পোকার ডিম উৎপাদন একটি জটিল প্রক্রিয়া। একমাত্র বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডই সরকারি পর্যায়ের রোগমুক্ত ডিম উৎপাদন করে থাকে। রেশন ডিম বর্তমানে কার্ড পদ্ধতিতে বসনিদের কাছে সরবরাহ দেওয়া হয়। মেটে কলপ, দো-কলপের ও তে-কলপের পলু পালনকে চাকি পলু পালন বলে।চাকি পলু পালনের কৃতকার্যের উপরই রেশম গুটি উৎপাদনের সফলতা নির্ভরশীল। রেশম পোকা শুককিট অবস্থায় ৪ বার দেহের খোলস বদল করে। ৪র্থ বা শোধ কলপ ও ৫ ম বা রোজের পলুকে বয়স্ক পলু বলা হয়। এই অবস্থায় পলু প্রচুর পাতা খেয়ে থাকে। ৫ম অবস্থায় পলু ৫-৬ দিন তুঁত পাতা খাওয়ার পর মুখ থেকে রেশম নিঃসরণ করে এবং দেহের চারপাশে গুটি তৈরি করে।এই অবস্থায় পোকাকে পোকা পলু বলে। পাকা পলুকে গুটি তৈরির উদ্দেশ্যে ডালা হতে বাঁশের তৈরি চন্দ্রকিতে স্থানান্তরিত করা হয়। 


গ)রিলিং বা রেশম গুটি হতে সুতা আহরনঃ

রেশম উৎপাদন একটি অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া। রেশম গুটি থেকে রেশম তৈরি করা হয়।এদের একমাত্র খাবার তুঁততপাতা। রেশম কিট ডিম থেকে জন্মায় এবং গুটিতে স্থানান্তরিত হওয়ার পর্যায় টেস্ট করে তারা রেশম মথ হিসেবে আবির্ভূত হয়।স্ত্রি মথ তখন কালচক্র পুনরায় শুরু করার জন্য ডিম পারে। গুটিবদ্ধ অবস্থায় রেশম সিউপা বা কিট গুলো মেরে ফেলে সেগুলো সেদ্ধ করে সুতা ছাড়ানো হয় এবং পরে তা গোটানো হয়।এই সুতা পরে তা বিভিন্ন ধরনের বস্ত্র তৈরির জন্য নানাভাবে প্রস্তুত করা হয়। এটি দেখতে অনেকটা কবুতরের গুটির ন্যায়।কোকুনোর সুতা অবিন্যস্ত , মাল্টিভোল্টাইন জাতের ক্ষেত্রে ভেতরে ৫০০ থেকে ৭০০ মিটারেরও বেশি লম্বা একটি মাত্র সুতা সম কেন্দ্রীয়ভাবে বিন্যস্ত থাকে। বাইভোল্টাইন জাতের ক্ষেত্রে  ১০০০ থেকে ১২০০ মিটারের বেশি সুতা পাওয়া যায়।।কোকুন তৈরি হতে তিন দিন সময় লাগে। কোকুনের আকৃতি ও রঙে ভিন্নতা দেখা যায়।৮ দিনের মধ্যে গুটির ভেতর শুটকিট কিউপায় পরিণত হয়।কিউপায় পরিণত হওয়ার পূর্বেই কোকুন গরম পানিতে সিদ্ধ করে ভেতরের পোকাটি মেরে ফেলতে হয়। এই কখন থেকে সুতা কালেক্ট করা হয়। পূর্ণাঙ্গ কিউপা মথে পরিণত হয়ে গুটির প্রান্ত ফুটা করে যদি বের হয়ে আসে তবে সুতার ধারাবাহিকতা ছিন্ন হয় এবং রেশম সুতার গুণগত মান হ্রাস পায়। দুই থেকে ছয়টি গুটির ভেতরের সুতা একত্রিত করে একটি রিল তৈরি করা হয়।বাইরের পরিত্যক্ত সুতা গুলো পাকিয়ে স্পানসিল্ক প্রস্তুুত করা হয়  যার দ্বারা তৈরি হয় মটকা জাতীয় সিল্ক।


Md Shah jamal
Jr. Article Writer 
IE And Textiles News 
https://ietextiles.blogspot.com/



No comments